শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৪ অপরাহ্ন

মুক্তমত



ডেসিস ডেস্ক

প্রকাশ: ২০২২-০২-১৬ ০৬:৩৪:৩৪


মুক্তিযোদ্ধা বাবার স্বীকৃতির জন্য কন্যার আকুতি

যুদ্ধের করে স্বাধীন হয়েছে -এমন দেশের সংখ্যা পৃথিবীতে বেশি নয় মোটেও। তবে এর একটি যখন বাংলাদেশ, তখন বিশ্বের বুকে এ দেশটি আলাদাভাবে মর্যাদা পাবে, স্বাধীনচেতা, লড়াকু আর যুদ্ধজয়ী বীর-বাহাদুরদের জন্মভূমি হিসেবে দেশটির স্বকীয় পরিচিতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু যাদের কারনে আজ আমরা বিজয়ী, স্বাধীন সার্বভৌমত্বের অধিকারী, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের একটি সুন্দর মানচিত্র কিংবা বিশ্বের ১ নাম্বার অর্থবহ (লাল-সবুজ) পতাকার মালিক, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের যদি স্বীকৃতি দেওয়া না হয়, অবমূল্যায়নের ঘানি টেনে টেনে পরপারে চলে যেতে দেয়া হয়, তাহলে তো ইতিহাস আমাদের কোনদিনও ক্ষমা করবে না। কারন আমাদের এতো এতো অর্জনের মূলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অমূল্য অবদান যে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।

তারা নিজেদের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে একাত্তরের ধ্বংসস্তূপ থেকে এই সুন্দর বাংলাদেশ আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন।ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ৪৯তম বিজয় উদযাপন করছে দেশের আপামর জনতা। প্রতিবারই বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা, হৈ-হুল্লোড় আর ফুর্তি-আমোদধর্মী নানা আয়োজন-অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে জাতি উদযাপন করে আসছে দিনটি। কিন্তু এর ব্যতিক্রম থেকে গেলাম আমি।

আমি আনন্দিত হতে পারিনি একটি মুহূর্তের জন্যও। তীব্র চাপা কষ্ট প্রতিনিয়ত আমাকে আহত করে, ব্যথিত করে! আর্তনাদ করে ডুকরে কাঁদি ডিসেম্বর আসলেই। অতৃপ্তি বাসা বাঁধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির কারনে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি বলে। ভুলতে পারিনা আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার কথা, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার অকৃত্রিম অবদানের কথা। কিছুতেই মানতে পারিনা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও সরকারি ও দরকারি স্বীকৃতিটুকু না পেয়েই তার পারপারে চলে যাবার কথা।

আমার তো মনে হয়- পরপারে এখনও আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার আত্মা অতৃপ্ত, সেই সাথে আমারও। কারন বাবা জীবন বাজি রেখে দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধজয় করেও এর স্বীকৃতিটুকু পাননি আর আমি সেই হতভাগা মুক্তিযোদ্ধা বাবার কন্যা হয়েও কেবল স্বীকৃতির অভাবে ‘মুক্তিযোদ্ধার কন্যা’র মতো গৌরবোজ্জ্বল মুকুটখানি মাথায় ব্যবহার করতে পারি না।প্রতি বছরই আমি বিজয় দিবস উদযাপন করি। দিনের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শুরু করি পবিত্র এ দিনটি।

আজন্ম এভাবেই পালন করে চলেছি শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস, শহীদ দিবস এবং স্বাধীনতা দিবস। বাবার জীবদ্দশায় তার হাত ধরে মধ্যরাতেও শহীদমিনারে ফুল দিতে যাওয়া হতো। এভাবেই ধমনীতে, শোনিতে মিশে আছে শহীদ মিনার আর শহীদ স্মৃতির প্রতি দায়িত্বশীলতা। আর তাই এবারের মহান বিজয়ের এ মাসে প্রিয় বাবাকে নিয়ে কিছু কথা তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি।দুই. মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাতক থানার পূর্ব দিকের কিয়দংশ এবং ভোলাগঞ্জ (বর্তমানে কোম্পানিগঞ্জ থানা) অঞ্চল ৬নং সেক্টরের একটি সাব-সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত ছিলো।

এই সাব-সেক্টরের উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল হক এম এন এ আর সংগঠক ও ক্যাম্প ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে ছিলেন- হেমেন্দ্র কুমার দাস পুরকায়স্থ, কমরেড মানিক মিয়া, ড. হারিছ আলী, ড. আব্দুর রহিম, মদরিছ আলী, বি এ এম এ খালেক, আব্দুল গণি (দিরাই) ও ময়নুদ্দিন (শ্রীমঙ্গল)। তারা প্রত্যেকেই খুব নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সাব-সেক্টরটির কিছু উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের মধ্যে ছিলো গৌরীনগর যুদ্ধ।

রণক্ষেত্রের জন্য গৌরীনগর এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। সেখান থেকে সালুটিকর ও বিমানবন্দরের দুরত্ব মাত্র ৬-৭ কিলোমিটার। ফলে সালুটিকরে অবস্থিত পাক বাহিনীর হেডকোয়ার্টারে আঘাত হানা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিলো। তাছাড়া যুদ্ধের শেষের দিকে বাম ফ্রন্টের গেরিলা গ্রুপ তৈরির একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কিছুটা ট্রেনিং এর জায়গাও পান তারা। সুনামগঞ্জ অঞ্চল হতে এরকম একটি গ্রুপকে ট্রেনিং-এ পাঠানো হয়েছিলো। তাঁরা ট্রেনিং সমাপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে সুনামগঞ্জ অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।

এ দলটির মধ্যে সুনামগঞ্জ অঞ্চলের সাইফুর রহমান শামসু (আরপিন নগর, সুনামগঞ্জ), শিবনাথ চৌহান (হাছন নগর, সুনামগঞ্জ), বামপন্থি নেতাদের মধ্যে বরুণ রায়, আলী ইউনুস এডভোকেট, গুলহার আহমেদ, নজির হোসেন, আব্দস শহীদ চৌধুরী (দিরাই), আব্দুল গণি (দিরাই) ও সৈয়দ আব্দুল হান্নান (জগন্নাথপুর) মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে এবং বামপন্থি গেরিলা বাহিনী তৈরি করতে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন।

উল্লেখ্য যে, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা 'আব্দুল গণি (দিরাই)' দীর্ঘ নয় মাস চেলা ও ইউথক্যাম্প ভোলাগঞ্জ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং চূড়ান্ত বিজয়ের পর চেলা সাব-সেক্টর কর্তৃপক্ষের কাছে সমস্ত দায়িত্ব হস্তান্তর করে এগারো দিন পর তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সে সময় বাবার সাথে যারা যুদ্ধ করেছেন, তাদের সকলের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকলেও আমার হতভাগ্য বাবার নামটি অদৃশ্য কারণে তালিকাভুক্ত হয়নি।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার বাবা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এর কিছুদিন পর দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সাবেক যুগ্ম-সচিব) মরহুম মাইন উদ্দিন খন্দকারের সহযোগিতায় স্থানীয় উপজেলা সদরে একটি গণপাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজও বিদ্যমান।

তখনকার উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীও এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠায় বাবার সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।তাছাড়া আমার বাবা ছিলেন একজন সমাজসচেতন ও শিক্ষিত মানুষ। ছিলেন শক্তিমান লেখক সত্ত্বা, একজন সাহসী সাংবাদিক। তিনি "সুনামগঞ্জ বার্তা", "যুগভেরী" ও জাতীয় দৈনিক "সংবাদ" ইত্যাদি পত্রিকায় কাজ করেছন বহুদিন। নির্বিঘ্নে তুলে ধরেছেন স্থানীয় জনপদের মাটি ও মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, চাওয়া-পাওয়া আর সমস্যা সম্ভাবনার কথা।

তাইতো মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ, পীর হবীবুর রহমান, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রসুন কান্তি বরুন রায় প্রমুখ নেতৃবৃন্দ আমার বাবাকে ভালোবাসতেন, কাছে ডাকতেন, পাশে রাখতেন। তাছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের মহানস্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও খুব স্নেহভাজন ছিলেন আমার বাবা।আজ মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর পার হয়ে গেলো, দেখতে দেখতে চলে গেলো বাবার মৃত্যুর চৌদ্দটি বছর।

কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার বাবা পাননি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনও স্বীকৃতি রাষ্ট্রের কাছ থেকে। আমি বিশ্বাস করি- মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশকে স্বাধীন করার জন্য, স্বীকৃতির জন্য নয়। নিশ্চয় বাবাও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তিনিও বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জীবন-সংসারের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। পাক হানাদারদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনা অস্ত্র জাতির পিতার আহ্বানে তার পায়ের সামনে বিছিয়ে দিয়ে ফিরে এসেছিলেন সাধারণ জীবনে।

কিন্তু একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তিনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পবেন না, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের ব্যবস্থাটুকু হবে না, তার কন্যা হিসেবে এমনটি মেনে নেয়া যে কতো কষ্টের, তা বলে বুঝাতে পারবো না।তিন. আজকাল প্রায়ই আমাকে প্রশ্নের সম্মূখীন হতে হয়- আমার বাবা আদৌ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কি না! কারণ বাবার স্বীকৃতি নেই। নেই আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ডকুমেন্টও। যেটুকুই ছিলো ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

আমার বাবা ছিলেন আত্মপ্রচার বিমূখ মানুষ। তিনি মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন অতপ্রোৎভাবে। কখনও এসবের স্বীকৃতি চাননি। আজ যখন এমন প্রশ্ন তুলা হচ্ছে আমার মৃত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে নিয়ে, তখন তো আর আমি নিশ্চুপ থাকতে পারি না। কন্যা হিসেবে বাবার ন্যায্য অধিকারটুকু আদায় করে নেয়া, প্রকৃত ইতিহাস ও সত্য কথাগুলো সমাজে তুলে ধরা এবং তা প্রমাণ করা নিশ্চয় আমারও দায়িত্ব। তাই বাবাকে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করলাম, লিখতে লাগলাম লোখমুখে শোনা এবং বিভিন্ন সময় (গল্পের ছলে) বাবার মুখে বলা তাঁর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের রোমাঞ্চকর কথামালা। একটা সময় হাতে আসলো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনেকগুলো বই।

আমি পড়তে লাগলাম। একে একে পেয়ে গেলাম প্রিয় বাবার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার, সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করার এবং যুদ্ধজয় করে বীরের বেশে ফিরে আসার নির্ভরযোগ্য ও প্রকৃত অনেক ঘটনাবলী। তখন থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় প্রিয় বাবার নাম খোঁজতে শুরু করি।চার. গেলাম দিরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (সাবেক) আতাউর রহমানের কাছে। জানতে চাইলাম মুক্তিযোদ্ধাদের লিস্টে কি আমার বাবার নাম আছে? তিনি একথা শোনা মাত্রই আমার সাথে রূঢ় ব্যবহার করতে লাগলেন।

স্পষ্ট বলে দিলেন- "তোমার বাবা কোন কালেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না"। আমি আবার খুব বিনয়ের সাথে জানতে চাইলাম- বাবা যদি মুক্তিযোদ্ধা না হন, তাহলে এতোগুলো বইয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম, বাহিনী তৈরি করা, অপারেশনের প্ল্যানিং করা, যুদ্ধে অংশ গ্রহণের কথা ইত্যাদি আসলো কি করে? তিনি তখন প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে লাগলেন, কোন রকম সাহায্য কিংবা সদুত্তর দেয়া তো দূরের কথা উল্টো বরং টিটকারি করলেন আমার সাথে। তার পাশে চামচা গোছের যারা ছিলো, তারাও তাল দিচ্ছিলো বড় নিষ্ঠুর ভাবে। আমি তখন নিরুপায়, অসহায়বোধ করলাম আর আশ্চর্য হলাম- একজন দায়িত্বশীল মুক্তিযোদ্ধার আচরণ এতোটা... হতে পারে দেখে।

অথচ এরাই মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিস্টেড করেন। এদের কারণেই হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে হয় বাণিজ্য, মুক্তিযুদ্ধের সনদ হয় বেচাকেনা, তালিকাভুক্ত হয়ে যায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তানরা (যাদের অনেকেই একাত্তরে শিশু বয়েসি ছিলো) কিংবা রাজাকাররাও পেয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের স্বীকৃতি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হন বারংবার।আমি হতাশ হইনি মোটেও বরং আরও উদ্যম, সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করে এগিয়ে যাই। প্রচন্ড জেদ চাপে মনে।

বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন -এটা প্রমাণ করতে না পারলে তো আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না কোন কালে। অবশেষে ‘রক্তাক্ত একাত্তর’ নামের একটি বই আমার হাতে আসলো। বইটি লিখেছেন- ভাটিবাংলার কৃতিসন্তান, মুক্তিযুদ্ধের বিদগ্ধ গবেষক, সুনামগঞ্জ বারের সাবেক সভাপতি বজলুল মজিদ খসরু। বইটিতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার বাবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ও বীরত্বের কথা লিখা আছে। এই বইটি পড়ে বাবা সম্পর্কে নতুন করে অনেক কিছু জানতে পারলাম। একদা দেখা করলাম লেখকের সাথে।

তিনি দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলে দিলেন- “তোমার বাবা আব্দুল গণি ছিলেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহসী মুক্তিযোদ্ধ”।পাঁচ. বাবা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং সরাসরি এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, জীবদ্দশায় তিনি কখনও এসবের স্বীকৃতি চাননি। তিনি বরং ব্যতিব্যস্ত ছিলেন দেশ গঠনের কাজে, সামাজসচেতনতা তৈরির কাজে, অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজকে শিক্ষার অালো দিয়ে আলোকিত করার কাজে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধরে সাধারণ জনগণকে দেশপ্রেমে উদ্ভোদ্ধ করার কাজে। কোনো কিছু পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব কষেননি কখনও। তিনি প্রায়ই বলতেন- "আমরা জীনব-সংসারের মায়া তুচ্ছজ্ঞান করে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলান সম্মুখ সমরে।

" বাস্তবেও তাই। আমার বাবা যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছিলেন বিজয়ের রক্তিম সূর্য, একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, এই সুন্দর স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ৪ যুগ পরেও মুক্তিবার্তায় আজও তার নাম উঠেনি। অথচ তার সঙ্গী-সহযোদ্ধা সকলের নাম শোভা পাচ্ছে তালিকা জুড়ে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কল্যাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকারের অবদান অপরিসীম।

কিন্তু “বাতির নীচে অন্ধকার” এই অমোঘ সত্যের দেখা মিলে আমার বাবার জীবনে। তিনি প্রকৃত যুদ্ধজয়ী মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধপরবর্তী জীবনের বাকি সময়টাতেও অনড় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায়, একাত্তোরের ঘটনায় কিংবা অসাম্প্রদায়িক চেতনায়। তবুও তিনি পাননি মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃত। কতোটা অতৃপ্তি নিয়েই চলে গেলেন পরপারে, না ফেরার দেশে। জীবদ্দশায় শুনে যেতে পারেন নি তিনি একজন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। মৃত্যুর এতোদিন পরেও না। তাই মাননীয় সরকার প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে আকুল আবেদন- আমার বাবা আজ বেঁচে নেই, তার নাম তালিকাভুক্ত করলে আমরা যেমন সন্তান হিসেবে গৌরববোধ করব, সম্মানিত হবো, তেমনি আমার দৃঢ় বিশ্বাস- বাবাও ওপারে পুলকিত হবেন, প্রাপ্তির আনন্দে তার বিদেহী আত্মায় প্রশান্তি সঞ্চারিত হবে।

তাই অনুগ্রহ পূর্বক ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবার আগেই আমার বাবা এবং তার মতো অস্বীকৃত ও সুবিধা বঞ্চিত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্ত করার পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় মর্যাদাসহ তাদের কবর সংরক্ষণের কার্যকরী ব্যবস্থা নিন।

লেখক : জান্নাতুল শুভ্রা মনি, কবি ও এপ্রেন্টিস ল’ইয়ার, সিলেট জজকোর্ট


রু

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Sidebar Google Ad Code