‘পিয়নই ডাক্তার, তিনিই সব’
সিলেটের মোগলাবজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র
শনিবার দুপুর ১২টা। সরেজমিন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল রোগীদের ভিড়। দায়িত্বরত পাপিয়া দে পিয়া অনুপস্থিত। অন্য কোন চিকিৎসক কিংবা ফার্মাসিস্ট না থাকায় রোগী দেখছেন এমএলএসএস (অফিস পিয়ন) আয়মন বিশ্বাস। আগত রোগীদের সমস্যা শুনে ওষুধও দিচ্ছেন তিনি।
এর কিছুক্ষণ পর ওষুধ নিলেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আয়া আলেয়া বেগম (৪০)। এরপর দুপুর পৌনে ২টারদিকে তিনি এফডব্লিউবি সৈয়দা জুহী সালওয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বের হয়ে যান। ঠিক সে সময় কথা হয় তাদের দু’জনের সঙ্গে।
এসময় এমএলএসএস’র নিকট থেকে নিজের ওষুধ নেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে আয়া আলেয়া বেগম বলেন, প্রতিদিন দেড় থেকে ২০০ রোগী ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্যে আসেন। তাদের সবাইকে অফিস পিয়ন আয়মন বিশ্বাস চিকিৎসা সেবা ও ওষুধপত্র দেন। আসলে এখানে ‘অফিস পিয়নই ডাক্তার, তিনিই সব’।
তারপর বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় অফিস পিয়ন আয়মন বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি তার পরিচয় দিতে গিয়ে জানালেন তার বাড়ি জকিগঞ্জ উপজেলার চানপুর গ্রামে। তিনি ২০১০ সাল থেকে এই কেন্দ্রে এমএলএসএস পদে যোগদান করেন। ফার্মাসিস্ট না থাকায় গত ১০বছর ধরে তিনি রোগী দেখছেন এবং তাদেরকে ওষুধও দিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য কর্তৃপক্ষ তাকে বিশেষ ট্রেনিংও দিয়েছেন।
স্থানীয় ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানাগেছে, গত ৩আগষ্ট দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সালাহ্উদ্দিন মিয়া স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ দেওয়া হয়। এতে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পাপিয়া দে পিয়াকে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সপ্তাহে প্রতি রবিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার নিয়মিতভাবে দায়িত্বপালন করতে বলা হয়। কিন্তু তারপরও পাপিয়া দে ওই কেন্দ্রে মাসেও একদিন যাননি। অভিযোগ উঠেছে, কর্তব্যে অবহেলার পাশাপাাশ নিয়ম নিতির তোয়াক্কা না করে বসে বসে কেবল বেতন গুণছেন ওই চিকিৎসক।
রেঙ্গা বাজারের মাকতাবায়ে ক্বাসেমী লাইব্রেরীর স্বত্তাধীকারী মাওলানা শারিফ উদ্দিন বলেন, মাসে একদিনও কোন চিকিৎসক বা দায়িত্বরত পাপিয়া দে পিয়া আসেননি। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত খুলা থাকার কথা থাকলেও মন ইচ্ছা খোলা ও বন্ধ করা হয়।
রমজানপুর গ্রামের ময়নুল ইসলাম বলেন, ডাক্তার না আসায় এখান থেকে এ অঞ্চলের কেউই সাঠিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেননা। পিয়নের কাছ থেকে চিকিৎসা নেয়া মানে- ছাগল দিয়ে হালচাষ করা আরকি!
রেঙ্গা বাজারের টেইলার্স হারুনুর রশিদ বলেন, চিকিৎসক না থাকায় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বেশ কিছুদিন এখানে নানা অপকর্ম করা হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পাপিয়া দে পিয়া বলেন, গত রমজান মাসের পর থেকে অলিখিতভাবে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার সুশান্ত মহাপাত্র’র নির্দেশে তিনি উপজেলা হাসপাতালে দায়িত্বপালন করছেন। যে কারণে তিনি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে পাছেন না।
তবে, তার এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আরএমও ডা. সুশান্ত মহাপাত্র। তিনি এপ্রতিবেদককে বলেন, এধরনের কোন নির্দেশনা তিনি দেননি। তাছাড়া তিনি বড়ধরনের কোন অফিসারও নন।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডাক্তার মো. সালাহ্উদ্দিন মিয়া বলেন, জনবল সংকটের কারণে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পাপিয়া দে পিয়াকে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে দায়িত্বপালন করানো হচ্ছে। তবে, সপ্তাহে একদিনও যদি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না যান তাহলে এই বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
আর এমএলএসএস আয়মন বিশ্বাস কিভাবে রোগীদের ওষুধপত্র দেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি (ইউএইচও) বলেন, ফার্মাসিস্ট নিয়োগের অপেক্ষায় থকলে অনেক কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে। যে কারণে আয়মন বিশ্বাসকে দিয়েই মোগলাবাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিচালিত হচ্ছে।
ডেসিস/জেকে/১৯ আগষ্ট ২০২৪ইং