শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫১ অপরাহ্ন

জাতীয়



ডেসিস ডেস্ক

প্রকাশ: ২০২২-০৬-০৭ ০৮:৩৯:০৬


কৃষকের মন কাড়লো ‘বঙ্গবন্ধু ধান’

নাইজারশাইল, জিরাশাইল, দাতখানি বা কাটারির মতো। হালকা লালচে রংয়ের এ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এতে প্রথমবারেই কৃষকের মন কেড়েছে ‘বঙ্গবন্ধু ধান’। চলতি বোরো মৌসুমে মাঠে প্রথমবারের মতো সীমিত পরিসরে চাষ হয় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি ধান-১০০, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু ধান’।

গবেষকদের মতে, ওই ধানের চালের সবচেয়ে বড় উপকার জিঙ্কের বেশি উপস্থিতি। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, রোগ-প্রতিরোধ ও খিদে বাড়াতে এ চাল উপকারী। কারণ ১৪৮দিন জীবনকালের এ ধানের উচ্চতা ১০১ সেন্টিমিটার। প্রতিকেজি চালে জিঙ্কের পরিমাণ ২৫.৭ মিলিগ্রাম, অ্যামাইলোজ ২৬.৮% ও প্রেটিন ৭.৮%।

জানা যায়, একর প্রতি ৩৬-৪০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া গেছে, যা প্রচলিত জাত ব্রি ধান-২৮ এর চেয়ে বেশি। ধানের দানা পুষ্ট এবং আকার কিছুটা গোলাকার। এরইমধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই শেষে তা অনেক কৃষক আগ্রহের সঙ্গে চাল বানিয়ে ভাত রান্না করে খেে ছেন।

তারা বলেছেন, এ ধানের চাল বাজার মাতাবে। ঝরঝরে ভাত ঠিক কাটারিভোগের চালের মতো ছোট ও চিকন। এ চালে কেবল ঘ্রাণ নেই। তা ছাড়া সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। বিশেষ করে জিঙ্কের উপস্থিতি প্রচলিত সব জাতের ধানের চেয়ে বেশি। অ্যাইমাইলোজের পরিমাণও বেশি। ভাতও সুস্বাদু। আতপ ও সেদ্ধ উভয় চালই আকর্ষণীয় আকারের।

তবে, যেহেতু চাষ হয়েছে সীমিত জমিতে তাই এ চাল এ বছরই বাজারে আসছে না। বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসতে আরও ৩-৪ বছর সময় লাগবে। তবে, যারা সৌখিন চাষি বা ক্রেতা তারা চুক্তিভিত্তিতে এ ধান চাষ করে চাল বানিয়ে বাজারে আসার আগেভাগেই স্বাদ নিতে পারেন বা পারিবারিকভাবে খেতে পারেন। এ চালের সবচেয়ে বড় উপকার জিঙ্কের বেশি উপস্থিতি। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, রোগ-প্রতিরোধ ও খিদে বাড়াতে এ চাল উপকারী।

খুলনার ডুমুরিয়ায় এক বিঘা জায়গায় এ ধান চাষ করান সৌখিন ধানচাষি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এসএম আতিয়ার রহমান। একই জমিতে ২০১০ সালে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৫০ ‘বাংলামতি’ চাষ করে সারাদেশে সাড়া ফেলেন।

এবার বঙ্গবন্ধু ধান চাষ সর্ম্পকে তিনি বলেন, নতুন উদ্ভাবিত এ ধান সম্পর্কে জেনে তিনি ব্রির সদর দপ্তর গাজীপুরে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে বীজের ব্যাপারে ব্রিরর গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিলে তিনি সেখানকার প্রধান ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে ৫ কেজি বীজ সংগ্রহ করেন।

এরপর ওই বীজ দিয়েই ডুমুরিয়ার কার্তিকডাঙ্গা বিলে এক বিঘা জমিতে এ ধানের চারা লাগানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। এবার ঈদুল ফিতরের প্রায় ৮/১০ দিন আগেই ধান কাটা হয়। কাটা ও মাড়াই শেষে ধান ভাঙিয়ে চাল দেখেই তিনি অবাক হন। শতকরা ৯৫ শতাংশের বেশি চাল পূর্ণাঙ্গ রয়েছে অর্থাৎ ভাঙেনি।

ব্রির গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানান, এবার তিনি এক হাজার কেজি বীজ কৃষকদের দেন। তার মধ্যে অল্প কিছু নড়াইল ও বাগেরহাট এলাকাতেও গেছে। তবে, সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। তার প্রদত্ত বীজে ৫০০ একরেরও বেশি জায়গায় এ ধান চাষ হয়েছে, যা সারা দেশে চাষকৃত জমির এক তৃতীয়াংশেরও বেশি। গোপালগঞ্জের চাষিরা সাধারণত মোটা ধান চাষ ও মোটা চাল খেতে অভ্যস্ত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ধানের চাষ করে তারা খুশি।

কারণ এ ধানের উৎপাদনও ভালো এবং রোগবালাই কম হয়েছে। বাজারে দু’চারজন ধান বিক্রি করলেও তার দাম মপেয়েছেন প্রচলিত ২৮ জাতের চেয়ে বেশি। ফলে এ ধান আগামী মৌসুমে ব্যাপক চাষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে ব্রি ধান-২৮ বা অন্য অনেক ধানের অবাদের স্থান দখল করে নেবে ‘বঙ্গবন্ধু ধান’। তিনি জানান, এ ধানের জীবনকাল ১৪৮ দিন। এ ধানের উচ্চতা ১০১ সেন্টিমিটার। প্রতিকেজি চালে জিঙ্কের পরিমাণ ২৫.৭ মিলিগ্রাম, অ্যামাইলোজ ২৬.৮% ও প্রেটিন ৭.৮%।  


সূত্র : সমকাল


ডেসিস/জকে/ ০৭জুন ২০২২ইং

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Sidebar Google Ad Code